জমি কেনার আগে কি কি ডকুমেন্ট অবশ্যই চেক করা উচিত
অনেকে জিজ্ঞাসা করেন জমি কেনার আগে নিয়ম কী/ জমি ক্রয়ের আগে ক্রেতার করণীয় কী? এই সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আমাদের এই প্রয়াস।
অধিকাংশ মানুষ জীবনে একবার বসবাসের জন্য বাড়ি করার উপযোগী জমি কিনেন। বহু বছরের সঞ্চিত অর্থ/সম্পদ খরচ করে যে জমিটা ক্রয় করবেন তা অবশ্যই ভালো করে দেখে ও যাচাই করে নিতে হবে। এরপরও যে সমস্যা হবেনা বিষয় এমন নয়। তবে ভালো করে দলিলাদি দেখে জমি ক্রয় করলে জমি ক্রয় পরবর্তী ভোগান্তি ও সমস্যা তুলনামূলক কম হয়। আমরা অনেকে বিশ্বাস করে জমি কিনে থাকি। বিষয়টা আসলে এখানে বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আমরা যেমন একজনের পরিচয় জানতে গিয়ে তার বাবা-মায়ের নাম জিজ্ঞেস করি, জন্মস্থান জিজ্ঞেস করি, তেমনি জমির পরিচয় হচ্ছে তার দলিলাদি এবং প্রয়োজনীয় দখলীয় স্বত্ব।
যাইহোক, এবার আসা যাক মূল কথায়। জমি কেনার আগে করণীয় কী?
জমি কেনার আগে জমি সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো অবশ্যই চেক করবেন :
জমির মালিকানা ও দলিল:
জমি কেনার আগে সম্পত্তিতে বিক্রেতার সঠিক মালিকানা আছে কিনা ও উক্ত সম্পত্তি বিক্রয়ের বৈধ অধিকার আছে কিনা, তা যাচাই করুন। বিক্রেতার নিকট থেকে মালিকানা দলিল খতিয়ান ও পর্চা নিয়ে সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রেশন অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস ও তহসিল অফিস গিয়ে সঠিকতা যাচাই করুন। বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে মালিক হলে ক্রয় দলিলে বা বায়া দলিলে রেকর্ডের সাথে মিল আছে কিনা ও উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হলে যার মাধ্যমে মালিক হয়েছেন তার যোগসূত্র আছে কিনা দেখতে হবে। হিস্যা অনুযায়ী জমির বাটোয়ারা ঠিক আছে কিনা ওয়ারিশ সনদ দেখে নিশ্চিত হতে হবে।
একসময় মুখে মুখে জমি বিক্রি হতো, ক্রেতার কাছ থেকে জমির মূল্য নিয়ে জমি বিক্রেতা বলে দিতেন এই জমি এখন থেকে আপনার। অনেক সময় স্বাক্ষী থাকতো, আবার স্বাক্ষী না থাকলেও তেমন অসুবিধা হতোনা, পরিবারের লোকজনও তা মেনে নিতেন। তখন জমির মূল্য কম ছিলো, আবার মানুষের মধ্যে সততার বিষয়টি এখনকার চাই পাকাপোক্ত ছিলো। তাই এটি সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে বায়নার টাকাও রেজিস্ট্রেশন বায়নার মাধ্যমে বা স্ট্যাম্পে ডিড করে দেয়া হয়। পরিপূর্ণ টাকা পে অর্ডার করে দিয়ে বা রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে ক্যাশ টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশন নেয়। একদিকে জমির দাম যেমন অনেক বেড়েছে, অন্যদিকে মানুষের মধ্যে শঠতা ও দুনীর্তির প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায়, জমির দলিল দেখে, বুঝেশুনে জমি ক্রয় করতে হবে।

বায়না/বন্ধক:
বিক্রেতার জমিটি বায়না অথবা কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট বন্ধক দেওয়া আছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে। কিছু দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ আছেন, যারা এক জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি বা বায়না করেন। অনেক সময় জমি বিক্রেতা জমিটি বিক্রয়/পাওয়ার অফ এটর্নি দেয়ার আগে নিজের স্ত্রী-সন্তান বা নিকটের কাউকে পাওয়ার দিয়ে রাখেন। ফলে ক্রেতা রেজিস্ট্রেশন নেয়ার পর ঝামেলায় পড়েন। এইজন্য জমি রেজিস্ট্রেশন নেয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে বিষয়টি দেখতে হবে।
সম্পত্তির পরিমাণ ও দখল:
জমি কেনার আগে দলিল দাতার মালিকানা দলিলটি যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রেশন অফিসে গিয়ে দলিল দাতা ও গ্রহীতার নাম, তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি পরিমাণ এর সঠিকতা যাচাই করুন। এমনও বিক্রেতা আছেন যে, জমির কাগজ বিক্রি করেন। বলে থাকেন যে, জমির কাগজ ঠিক আছে তবে দখল নাই। এই সকল জমির দাম কিছুটা কম হয়। এই জমি কেনার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে জমিটা আপনি নাও পেতে পারেন। যারা জীবনের দুই/একবার জমির ক্রেতা হন, তাদের এই ধরণের জমি ক্রয় করা উচিত নয়।
তবে যাদের অনেক জমি আছে কিংবা পাশাপাশি দাগে/একই দাগে আরো জমি ক্রয় করেছেন কিংবা ব্যবসার জন্য জমি ক্রয় করছেন, তারা ক্রয় করতে পারেন। কারণ এই জমির দলিল ঠিক থাকলে সময়ের ব্যবধানে আপনি দখলও পাবেন। সেজন্য হয়তো অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে। জমির কোম্পানিগুলো সাধারণত এই ধরণের জমি ক্রয় করে থাকে এবং তাদের লোকবল দিয়ে জমি দখল বুঝে নেয়।
নামজারী, খতিয়ান:
জমির বিক্রেতার নামে সর্বশেষ নামজারী ও খতিয়ান আছে কিনা দেখতে হবে, থাকলে উক্ত নামজারী খতিয়ানটি সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে যাচাই করে দেখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, জমির মালিক সঠিক, দলিলও ঠিক আছে কিন্তু জমিতে নামজারী নাই। তাহলে জমি ক্রয় করা যাবেনা। কারণ বর্তমানে নামজারী ছাড়া কিংবা খতিয়ানে নাম থাকা ছাড়া জমি বিক্রি করা যায়না। অতএব জমি ক্রয়ের আগে অবশ্যই নামজারী আছে কিনা দেখতে হবে, আবার নামজারী থাকলেও তা ভূমি অফিসে চেক করতে হবে। অনেক সময় বিক্রেতা গাফলতির কারণে জমির নামজারী করায়নি। বিষয়টি এমন হলে বিক্রেতাকে জমির নামজারীর করার পরামর্শ দিতে পারেন। দলিল, নামজারী সব ঠিক থাকলে জমি ক্রয় করতে পারেন।
খাজনা:
হাল সনের খাজনা আদায় না থাকলে খাজনা পরিশোধ করতে হবে বা আদায় করা থাকলে সংশ্লিষ্ট তহসিল অফিসে গিয়ে বালাম নং দেখে চেক করতে হবে। খাজনা আপটুডেট থাকার অর্থ হচ্ছে জমির মালিকের নামে খতিয়ান হয়েছে বা নামজারি হয়েছে। অনেক সময় জমির মালিকগণ নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করেননা। সেক্ষেত্রে জমির কাগজপত্র ঠিক থাকলে খাজনা হাল সন নাগাদ খাজনা পরিশোধ করে জমি ক্রয় করা যায়। সাবরেজিস্ট্রেশন অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য খাজনা রশিদ প্রদর্শন করতে হয়। অতএব খাজনা দেয়া না থাকলে রেজিস্ট্রেশনের আগে অবশ্যই খাজনা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকারী স্বার্থ:
বিক্রেতার জমিতে সরকারী স্বার্থ আছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে জমি কেনার আগে। সরকার প্রয়োজনে নানান সময় নানান জায়গায় জমি এ্যাকোয়ার করে থাকে। আবার মালিকানাভুক্ত জমির মধ্যেও কিছু জমি খাস হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ডিসপিউট বা সরকারী স্বার্থের বিষয় থাকতে পারে। জমি ক্রয়ের পূর্বে এই সকল বিষয়ে অবশ্যই নজর রাখতে হবে। সরকার সাধারণত জমি এ্যাকোয়ার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে নির্দিষ্ট দাগে বা মৌজায় জমি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেয়। আবার খাস জমি হলে খতিয়ানে খাস হিসেবে উল্লেখ থাকে। অনেক সময় একই দাগের অন্দরে ব্যক্তিমালিকানা ও খাস উভয় প্রকার জমি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারের খাস জমি চিহ্নিতকরণ করতে হবে। অন্যথায় জমি রেজিস্ট্রেশনের পর নামজারি পাওয়া যাবেনা।
সার্টিফাইড কপি:
সি.এস, এস.এ ও আর.এস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি ডিসি অফিসে চেক করে নিতে হবে। অনেক সময় জালিয়াতচক্র ভুয়া কপি সার্টিফাইড হিসেবে দেখিয়ে থাকেন। এমতাবস্থায় ডিসি অফিসের সাথে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি মিলিয়ে নিতে পারলে ভালো। তাহলে আর সন্দেহের কিছু থাকেনা।
প্রয়োজনে আপনি ভূমি সংক্রান্ত আইনজীবির সহযোগিতা নিতে পারেন। জমি সঠিকভাবে ক্রয় করতে পারলে আপনি ও আপনার পরবর্তী জেনারেশন ঝঞ্জালমুক্ত থাকতে পারবে।
I’ve been surfing online more than 4 hours today, yet I never found
any interesting article like yours. It is
pretty worth enough for me. In my view, if all site
owners and bloggers made good content as you did, the internet will be a lot more useful than ever
before.